টাংগাইলের মির্জাপুরে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গনিত মেলা অনুষ্ঠিত

সমস্যা ভিত্তিক শিখন’ ও ‘হাতে কলমে প্রযুক্তির ব্যবহার’ এই স্লোগানে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ‘আলোকিত হৃদয় ফাউন্ডেশন’ পরিচালিত আলোকিত হৃদয় স্কুলে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গনিত মেলা (স্টেইম ফেয়ার)’। শিক্ষার্থীদের পাঁচটি দল বিভিন্ন বাস্তবিক সমস্যার স্বল্প খরচে, সেরা সমাধানের পরিকল্পনা ও কার্যকরী পদক্ষেপ গুলো তুলে ধরেছে এই মেলায়। দলের নাম নির্বাচনেও ছিল বিজ্ঞানের ছোঁয়া। নামগুলো হলো পৃথিবী, আলো, বাতাস এবং পানি। প্রতিটি দলের সমস্যা ও সমাধান ছিল ভিন্ন ভিন্ন। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই সমস্যা সনাক্ত করে তার উপর প্রজেক্ট তৈরি করে। স্টেইম ফেয়ারের প্রজেক্ট গুলো ছিল অনিরাপদ রাস্তা পারাপার,ডেংগু রোগের বিস্তার,জায়গার অভাবে বাগান করতে না পারা এবং শিশু পাচার। প্রতিটি দল প্রশ্নের মাধমে সমস্যার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। শিক্ষার্থীরা মূল সমস্যার ফলে আরো কি কি সমস্যা হতে পারে তা দিয়ে একটি ‘প্রবলেম ট্রি’ তৈরি করে এবং সমস্যাগুলোর সমাধানে একটি সম্মিলিত প্রত্যাশা নির্ধারণ করে।
প্রত্যাশা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে প্রতিটি দলই সম্ভাব্য সমাধান গুলো ‘ব্রেইন স্ট্রোমিং’ করে বের করে। এইধাপে আবারো শিক্ষার্থীরা প্রশ্নের মাধ্যমে সর্বশ্রেষ্ট সমাধানটি বের করে।সেই শ্রেষ্ট সমাধানটি বাস্তববায়নের জন্য প্রতিটি দল কর্মপরিকল্পনা করে কাজে নেমে যায়। নিরাপদ রাস্তা পারাপারের জন্য শিক্ষার্থীরা অভিভাবক ও এলাকাবাসিদের সাথে আলোচনা সভা করে।পাশাপাশি রাস্তায় গতি নিয়ন্ত্রক চিহ্ন এবং ফুট ওভারব্রীজ স্থাপনের জন্য শিক্ষার্থীরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে আবেদন পত্র লিখে।শিশু পাচার রোধে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই একটি নাটিকা প্রদর্শন ও মাইকিং করে এলাকাবাসিদের সচেতন করে এবং বিদ্যালয়-রাস্তার আশেপাশে পোষ্টারিং করে।ডেঙ্গু রোগ সমাধানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের টাকায় ‘হেন্ড-গ্লাভস’ কিনে বিদ্যালয়ের আশেপাশের ময়লা-আবর্জনা এবং জলাবদ্ধতা হতে পারে এমন জায়গা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে। জায়গার অভাবে বাগান না করতে পেরে শিক্ষার্থীরা খাবার দোকানের ফেলে দেওয়া পানির বোতল সংগ্রহ করে তা দিয়ে টব তৈরি করে দেওয়ালে ঝুলন্ত বাগান তৈরি করে এবং একটি জারি গানের মাধ্যমে এলাকাবাসিদের সচেতন ও করে। শিক্ষার্থীরা স্বল্প ব্যায়ে সমস্যাগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করেছে। কিছুক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা নিজেরদের ও অভিভাবকদের থেকে টাকা তোলে সমস্যার সমাধানে কাজ করেছে।
হাতে কলমে প্রযুক্তির ব্যবহার শিখার জন্য শিক্ষার্থীরা দুইটি প্রজেক্ট মেলায় উপস্থাপন করে।প্রজেক্ট দুইটির মধ্যে একটি হল রোবটিক্স ব্যবহার করে বাতাসের শক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুতিক বাতি নির্মাণ অপরটি হল আরডিওনো বোর্ড নির্মান করে মোবাইলের আপলিকেশনের মাধ্যমে রাস্তায় গাড়ি নিয়ন্ত্রন ও পরিচালনা করা।
স্টেইম ফেয়ারের প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাউসার সাবিনা। বিশেষ অতিথিদের মধ্যে ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের প্রভাষক(শিক্ষা) সাবিহা সুলতানা, কুলিয়ারচর উপজেলার রিসোর্স কর্মকর্তা মোহাম্মদ দুলাল মিয়া,মির্জাপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল আজিজ এবং আলোকিত হৃদয় ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান আবু নাঈম মোহাম্মদ শহিদুল্ল্যাহ। আলোকিত হৃদয় স্কুলের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা আজওয়া নাঈম মেলার সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন।
অতিথিরা প্রজেক্ট গুলো পরিদর্শন করেন এবং শিক্ষার্থীদের নানান বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে মুগ্ধ হয়ে প্রধান অতিথি কাউসার সাবিনা বলেন, “আলোকিত হৃদয় স্কুলের শিক্ষার্থীরা ‘সমস্যা ভিত্তিক শিখন’ যে প্রক্রিয়ায় সমাধান করেছে, তা সারা বাংলাদেশের রোল মডেল হতে পারে”। বিশেষ অতিথি সাবিহা সুলতানা বলেন, “আলোকিত হৃদয় ফাউন্ডেশনের সাথে পথচলা মাত্র কয়েক বছরের । এতো দ্রুত এই ‘সমস্যা সমাধানভিত্তিক শিখনের’ সফলতা পাওয়া যাবে তা ভাবিনি। এটি পর্যাক্রমে সারা বাংলাদেশের সকল বিদ্যালয়ে ছড়িয়ে দিতে হবে”। মির্জাপুর উপজেলার শিক্ষা অফিসার আব্দুল আজিজ বলেন,“এই বিদ্যালয়টির সকল কার্যক্রমই সৃজনশীল,এই স্কুলের সকল কার্যক্রমের পাশে থাকতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত”।
‘বিজ্ঞান,প্রযুক্তি,প্রকৌশল ও গনিত মেলা’র পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নাচ,গান,কবিতা,নাটক এবং আবৃত্তির মাধ্যমে তাদের প্রজেক্টগুলো সাবলিল ভাবে অতিথিদের সামনে তুলে ধরে।মেলার প্রজেক্ট উপস্থাপন পর্বটি পরিচালনা করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাকিলা খাতুন এবং অনুষ্টান সঞ্চালনা করে বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মেহরুন নিসা পান্না।স্টেইম ফেয়ার শেষে অতিথিরা অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ।

admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *